করোনার আরো ৮ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে চাহিদা বাড়ছে অক্সিজেনের

  রাজশাহী সংবাদদাতা  শনিবার | জুন ৫, ২০২১ | ১১:০১ পিএম

রাজশাহীতে আরো দীর্ঘ হয়েছে করোনায় মৃত্যু ও লাশের সারি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরো ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন ও ৩ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ জন এবং রাজশাহীর ৩ জন রয়েছেন। এর আগের দিন শুক্রবার রাজশাহীতে সব রেকর্ড ভেঙ্গে করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ নিয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। শনিবার রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৮ জনের জনের মধ্যে ৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী ছিলেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন ও রাজশাহীর ২ জন রয়েছেন। এছাড়া ৩ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের নাম করোনা পজিটিভ হয়ে মৃত্যুর তালিকায় ওঠানো হবে। তবে মৃতদের সবার মরদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষার পর নতুন নতুনভাবে ১৩১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ জন ও নওগাঁ জেলার ১ জন রয়েছেন। বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৬ জন রোগী। গত ২৪ মে দুপুর থেকে ৫ জুন সকাল পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০১ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে করোনা সংক্রমিত ছিলেন ৬১ জন। অন্যদের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, দিন যত গড়াচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ততই করোনাজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে। শনাক্তের সাথে বাড়ছে মৃত্যু। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগী বাড়ায় অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়ছে। এতে করোনা আক্রান্ত আর সব রোগীকে অক্সিজেন দিতে হিমশিম খাচ্ছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে রামেক হাসপাতালের অক্সিজেন মজুদ প্রায় শেষের পর্যায়ে। রোগীর যে চাপ বাড়ছে তাতে সংকট আসতে খুব বেশি দিন নেই বলেও মনে করছেন রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকরা বলছেন, সংকট সৃষ্টির আগেই অক্সিজেন মজুদ রাখা দরকার। কারণ করোনা রোগীর চাপ যে হারে বাড়ছে তাতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠতে পারে।

রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের প্রায় সবার অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। হাসপাতালে যেকটি ওয়ার্ডে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল, সেগুলো রোগীতে ভর্তি। এখন বারান্দা এবং বিছানায় রোগী রাখার প্রস্তুতি চলছে। বেড ছাড়াও এখানে অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় কী না সে ব্যাপারেও পরিকল্পনা চলছে। তাই আগে থেকে অক্সিজেনের মজুদ নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউ এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। আগে সব করোনা রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন অভর্তির সময় শতভাগ রোগীরই অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। তবে ২/৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অনেকের আর লাগছে না। কিন্তু ভর্তির শুরুতেই যে সবার অক্সিজেন লাগছে এটা সত্যিই ভীতিকর। ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক। তিনি বলেন, অক্সিজেনের মজুদ প্রায় শেষর পর্যায়ে। বেড নেই বললেই চলে। বর্তমান সংক্রামণ বাড়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এখন থেকে সজাগ না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।