পুলিশ-সাংবাদিকের ওপর হামলা: জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা : আইজিপি

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, রাজধানীতে ২৮ অক্টোবর বিএনপি'র মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অবরোধ, সমাবেশ বা কর্মসূচির নামে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইজিপি বলেন, মহাসমাবেশে অনেক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পুলিশের ওপর হামলাকারী এবং অগ্নিসংযোগকারী দুষ্কৃতকারীদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হবে।
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুরা পুলিশ বাহিনীর মতো মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা নিজের জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের মতো তারাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। দুষ্কৃতকারীরা চায় না তারা যে ছবি, তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যেগুলো তাদের বিপক্ষে যাক, এ আশঙ্কায় সাংবাদিক বন্ধুদের ওপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন ।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, উপ পুলিশ কমিশনার মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ মো. ফারুক হোসেনসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা এ সময়  উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, ‘আমরা তাদের (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিলাম। তবে, তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। এমনকি পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে অনেক পুলিশ সদস্যদের আহত করেছে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার আগেই বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। ঘটনার সঙ্গে যেসব দুষ্কৃতকারীরা জড়িত তাদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হবে।
অবরোধের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। কিন্তু একজন মানুষের অধিকার আছে তার রাস্তায় চলাফেরা করার। এটাকে যারা বাধাগ্রস্থ করবে, তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল কি না এমন প্রশ্নের  জবাবে আইজিপি  বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। ঘাটতি ছিল না বলেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। যখন তারা উচ্ছৃংখল আচরণ শুরু করেছে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছি। প্রথমে তারা হঠাৎ একটি বাসে আগুন দিয়েছে। এরপর কিছু মানুষ গাড়ি নিয়ে আসছিল। তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। সেদিন তো কোনো অবরোধ কর্মসূচি ছিল না। রাস্তা বন্ধ থাকবে তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারপরে তারা আমাদের লোকদের, সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করেছে। গাড়িতে আগুন জ্বালিয়েছে।
গাড়িতে যখন আগুন জ্বালায় তখন পুলিশের দায়িত্ব কি? উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ও ব্যক্তিগত জানমালের যখন ক্ষতি হয়, তখন সেটি প্রতিহত করা এবং ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা সে দায়িত্ব পালন করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেটুকু ব্যবস্থা নেওয়া ও শক্তি প্রয়োগ করা দরকার, সেটুকু করেছি।’
আইজিপি বলেন, ‘আমাদের একজন পুলিশ সদস্যকে মাথায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। গতকালও নারায়ণগঞ্জে আহত এক পুলিশ সদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন। একজন আনসার সদস্য মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে কাতরাচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের ওপরে হামলা করা হচ্ছে, এমন  প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের সঙ্গে জীবনের বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদেরকেও টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। তারা যে অপরাধ করছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সেটি তাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে সেজন্য তারা সাংবাদিকদের ওপরে হামলা চালায়।’
নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা ও চৌধুরী হাসান সরোওয়ার্দীর গ্রেফতারের পর কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্রের কোনো তথ্য গোয়েন্দা সূত্রে পেয়েছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘তাদের পেছনে কারা জড়িত আছে, সে বিষয় নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছে।
গোয়েন্দা তথ্য যেগুলো পাচ্ছি তা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য বলছি না। কিন্তু সবকিছু বিবেচনায় রেখে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত, ৪১ জন আহত এবং ১৭ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। সূত্র: বাসস