২০২০ সালে চীনে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে বাংলাদেশেও এই রোগের প্রথম রোগীর খবর শুনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার কিছু দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু সেই লকডাউন প্রয়োজন মতো বাড়তেই থাকে। আর ঘরবন্দী হয়ে পড়ে সব মানুষ। সেই সংকটময় সময়েই ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ৫ জন বন্ধু মিলে উদ্যোগ নেয় এমন একটি সংগঠন খোলার যা কাজে আসবে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কল্যাণে আর ভূমিকা রাখবে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে। আর সেই সংগঠনটিই হলো ইভ্যালুয়েশন অফ ইয়থ।
ইভ্যালুয়েশন অফ ইয়থ সংগঠনটি গড়ে তোলার পিছনে মূল লক্ষ্য ছিল সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো
ইভ্যালুসেশন অফ ইয়ত এর বিভিন্ন কার্যকর্ম
"প্রজেক্ট ইচ্ছেপূরণ"। লকডাউনে ঘরে বসে আমরা যখন মজার সব খাবার খাচ্ছি তখন অনেকটা না খেয়েই দিন কাটাচ্ছিল ঘরহীন পথশিশুগুলো। তাদের কথা ভেবে ইভ্যালুয়েশন অফ ইয়ুথ নিজস্ব ফান্ড থেকে আয়োজন করে প্রজেক্টেটির। এর মাধ্যমে এক বেলা তৃপ্তি করে খেয়েছিল শতাধিক পথশিশু।
সংগঠনটি তরুণ সমাজের নজর কাড়তে শুরু করেছে যেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইভ্যালুশন অফ ইয়ুথ আয়োজন করে তাদের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইভেন্ট "ইয়ুথ আর্কাডিয়া"। ১১টি সেগমেন্টের এই ইভেন্টে দেশজুড়ে সাড়া দিয়েছিলো প্রায় ৩০০০+ পারটিসিপেন্ট, যা একটি নতুন সংস্থা হিসেবে ছিল আশাতীত। অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ প্রদানে ইভেন্টে সর্বমোট ২৬,০০০ টাকার পুরষ্কারের আয়োজন করা হয়। ইভেন্টটির বিচারক প্যানেলে দেখা যায় তুহিন হোসেন, জাবির মিসবাহ, আদিব রেজা রঙ্গনের মতো ব্যক্তিবর্গের মুখ। এছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয় অনলাইন টিউটর সাদমান সাদিক।
শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করে যা অসহায় মানুষগুলোর জন্য এক অভিশাপস্বরূপ। আর তাই তদের দিকে একটু উষ্ণতার হাত বাড়িয়ে দিতে সংস্থাটি আয়োজন করে "প্রজেক্ট উষ্ণ অনীল"। প্রজেক্টেটির প্রথম ক্যাম্পেইনে নরসিংদীর ঘোড়াদীয়া কাঠবাগান ও ভাগদী মারকাস এলাকার দেড়শতাধিক পরিবারকে সাহায্য করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাম্পেইন ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে আয়োজিত হয়। যেখানে আরোও দেড় শতাধিক পরিবার এই ত্রাণ দ্বারা উপকৃত হয়।
বছরের প্রথম দিনে প্রায় পঞ্চাশ জন শিশুকে নিয়ে করি পিঠা উৎসব"। ইভ্যালুয়েশন অফ ইয়ুথ এর নাম জনমুখে পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে দায়িত্বও বাড়তে শুরু করে আর তাই প্রয়োজন পড়ে আরো বেশি উৎসাহী কিশোর ও তরুণের। তাই দল ভারী করতে শুরু করা হয় 'ইভ্যালুয়েশনিয়ার' নিয়োগ।
২১ সালের রমজানের চাঁদ ১৩ এপ্রিলের রাতের আকাশে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। খাবারের অভাবে বছরের বাকি দিনগুলোও যাদের রোজার মতোই কাটে তাদের জন্য একমাসের রমজান আর কিইবা ভিন্নতা আনে? সারাদিন পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলো, যাদের একবেলার খাবারেরও নেই কোনো নিশ্চয়তা সেই মানুষগুলোর জন্য রমজানের চাঁদ না যেনো কতটা ভয়ংকর! আর তাই খেঁটে খাওয়া এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে ইভ্যালুয়েশন অফ ইয়থ আয়োজন করে তাদের এবারের প্রজেক্ট 'হাত বাড়ানোর প্রত্যয়'। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে মাসজুড়ে বিভিন্ন জায়গার অসহায় মানুষগুলোর জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বাজার-সদাইয়ের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় ইফতার ও গিফট বক্সের। বাজার-সদাইয়ের প্রতিটি প্যাকেজে ছিলো চাল, ডাল, আলু পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। মাসজুড়ে এই প্যাকেজ ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ধানমন্ডি ও বেইলী রোডের প্রায় ৩৭০টি দরিদ্র পরিবারের কাছে পোঁছে দেওয়া হয়। রমজানের মাসের প্রায় ৩০দিনই অসহায়দের সাথে ইফতারের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয়। মিরপুর, ধানমন্ডি, গ্রীনরোড, পান্থপথ, শুক্রাবাদ, কুড়িল বিশ্বরোড, কালাচাঁনপুর, বনানীসহ ঢাকার বাইরের দিনাজপুরের বীরগঞ্জের অসহায় মানুষদের জন্যও এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। ফেইসবুক ইভেন্টে 'হাত বাড়ানোর প্রত্যয়' প্রজেক্টটি নামানোর পরপরই অনুদান আসতে শুরু করে। পুরো প্রজেক্টে মোট ১,৫৩,৩৩৫ টাকার অনুদান প্রাপ্ত হয় সংগঠনটি।
ঈদের আনন্দ সকলের জন্য সমান। আর তাই ঈদ যেনো সকলের জন্য বরকতময় হয় তাই ঈদের আনন্দ অসহায় মানুষগুলোর সাথে ভাগ করে নেওয়া হয় ঈদ গিফট বক্স বিতরণের মাধ্যমে। যেখানে তাদের জন্য ছিলো সেমাই, দুধ, চিনি, পোলাও এর চাল, নুডুলস, মসলা, পেঁয়াজ, আলু ও এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সাবান। মিরপুর ৬০ফিট, আগারগাঁও, শ্যাওড়াপাড়া ও ঢাকার বাইরের নেত্রকোনার পূর্বধলায় মোট ৫০টি পরিবারের সাথে এই ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয়। এতো আয়োজন ও কার্যক্রমের মাঝে দেখতে দেখতেই সংগঠনের এক বছর পূর্ণ হয়।
এক বছর পূর্তিতে তারা আয়োজন করছে তাদের আরোও একটি ভিন্নধর্মী ইভেন্ট, The Precursor: EOY's 365 and it's quest of evolving youths. এই ইভেন্টটিতে তারা যুক্ত করেছে ৬টি নজরকাড়া সেগমেন্ট। এই ইভেন্টের সেগমেন্টগুলো এর আগে আর কোন সংস্থাকে আয়োজন করতে দেখা যায় নি। ইভেন্টের পাঁচটি সেগমেন্ট এমনভাবে আয়োজন করা হয় যেনো এর মাধ্যমে সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রকমের মতামত জানা যায়। ইভেন্টের ষষ্ঠ উদ্যোগটিকে একটি প্রতিযোগিতা নয় বরং এক বছর শেষেও সবসময়ের মতোই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অঙ্গীকারস্বরূপ। ষষ্ঠ সেগমেন্টটিতে তারা আয়োজন করছে সপ্তাহব্যাপী সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের ক্যাম্পেইন।