বাদাম চাষে খুশি চরের কৃষকেরা 

  গোয়ালন্দ সংবাদদাতা  সোমবার | জুন ১৪, ২০২১ | ০১:৫৯ পিএম

বাদাম চাষে কম খরচে লাভের মুখ দেখছেন গোয়ালন্দ উপজেলার চরের কৃষকেরা।

কৃষকরা জানান, চরের জমি উর্বর হওয়ায় বেশি সার দিতে হয় না। তাই কম খরচে চাষ করা যায়। বীজ রোপণের তিন মাসের মধ্যে বাদাম তোলা যায়।

তবে ফলন ভালো হলেও বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের ভাষ্য।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পদ্মার  চরজুড়ে এখন বাদাম তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। চর মহিদাপুর, চর কইন্নাশনা, রাখালগাছি, বেতকাচরসহ বিভিন্ন এলাকার আরও কয়েকটি চরে বাদাম আবাদ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জনিয়েছে, উপজেলায় এ বছর ১৯৫ হেক্টর ও ১৫০ লক্ষ্যমাত্রা জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। 

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাহিরচর দৌলতদিয়ার সাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকার  বাদাম চাষি হানিফ খাঁ বলনে, “গতবার আমি ৫ বিঘা জমিতে বাদম চাষ করেছি। আমার মোট খরচ হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। আর বাদাম বিক্রি করেছি ৯০ হাজার টাকায়। আমার প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এবারও ৮ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি; জানি না এবার কী হবে। এবার প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।”

উত্তর দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার আরেক বাদাম চাষি মহিউদ্দিন শেখ বলনে, “গত বছর ২ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদাম ভালো আছে। লাভও বেশি হইবে বলে আশা করছি।”

তবে চাষিদের অভিযোগ, গোয়ালন্দদ বাজারে বাদাম বিক্রির কোনো শেড না থাকায় ৮ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। এতে তারা ক্ষতগ্রিস্ত হচ্ছেন। একটি বাজারে শেডের ব্যবস্থা করলে লাভবান হতে পারতেন বলে মনে করেছেন তারা।

অন্তরমোড় চরের রোস্তম আলী (৬০) বলেন, “বাবারে হামরা তো চরের মানুষ, চরেই থাহি, চরেই আমাগেরে বাড়ি-ঘর। আর তোমরা তো বাদামের কথা কইছাও। আমি এবার বাদাম চাষ করছি ১ একর জমিতে। বাদাম তো ভালোই হইছে। সরকার যদি আমাগেরে দিকে তাকায় তাহলে ভালোই দাম পাবানি। বাদামে তো এহন খরচ কম হয়, অন্য আবাদের চেয়ে। তাই বাদাম চাষ করছি। লাভ তো ভালোই হয়।” 

উপজেলা কৃষি বিভাগ ও বাদাম চাষিরা জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রলি র্পযন্ত সময়ে বাদাম তোলা শুরু হয়। বীজ লাগানোর আগে চাষ দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হয়; আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। তারপর সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বাদাম চাষিকে সার, বীজ দেওয়া হয়েছে। আর প্রণোদনা হিসেবে ১২০ জন কৃষককে ডিএপি ১০ কেজি, সার ৫ কেজি, বারী-৮ বীজ ১০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা চরের মাটি উর্বর হওয়ায় বেশি সার কিংবা কীটনাশক দিতে হয় না। তিন মাসের মধ্যই বাদাম ঘরে তোলেন চাষিরা। তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষিরা। “তবে বাদাম বাজারজাতকরণে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর ফলে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারছেন না।” বাদাম জমি থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বাজারজাত করা হলে কৃষকরা অধকি লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।