বিরল রােগে আক্রান্ত ছােট্ট আকৃতির শরীরটা নিয়ে দিনভর হামাগুঁড়ি দিয়ে গ্রাম-বাজারে গিয়ে সংগৃহীত সহায়তার অর্থে চলে আব্দুর রব (৭৯) এর জীবন। ঝড়, বাদল-তাপদাহে শরীরটা কানাঘােঁষা করলে হামাগুঁড়ি দিয়ে আর যাওয়া হয় না কােথাও। ওইদিন ঝুঁপড়িঘরে জ্বলে না চুলাও। এভাবেই দেহমনে ক্ষুধা নিয়ে হরহামেশা পার হয় এ জীবন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা সুন্দরবন গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৯০১৯২৯২১৮৯৯৪২। ছয় ভাই এক বােনের মধ্যে তিনি বড়। কয়েক বছর আগে প্রতিবন্ধী ভাতা কপালে জুটলেও বিশ্ব মানবতার মা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার সেমিপাকাঘরে থাকার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা অশীতিপর এই অসহায়ের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুজিবর্ষে দয়াভিক্ষা হিসেবে একটি ঘর চেয়েছেন তিনি। তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মুরশেদ আলম সাদ্দামের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় এই বৃদ্ধের সাথে। অকপটে জানিয়েছেন চরম অসহায়ত্বের কথা। একপর্যায়ে সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করজােড়ে তাঁর ভাষায় বলেন, "প্রধানমন্ত্রী আল্লাহরওয়াস্তে একটা ঘর দেন"। আমার ঘর নাই, কেউ নাই, আমি আপনার দেয়া ঘরে থেকে মরতে চাই বলে ফুলেফেঁপে কাঁদেন তিনি।
সুন্দরবন গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী মাে. হামিদুল ইসলাম, আবু সামাসহ অনেকে জানিয়েছেন, যুদ্ধকালিন সময়ে তারুণ্যে ঠকবগে যুবক ( জন্ম- ৩ এপ্রিল, ১৯৪২ইং) শারীরিক আকৃতিতে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন আব্দুর রব। একদিন বাড়ি পার্শ্ববর্তী মেঘালয় সীমান্তের নােম্যান্সল্যান্ড এলাকায় যাওয়ার পর থেকে শরীরে দেখা দেয় রােগবালাই। অর্থের অভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে শরীরের আকৃতি ছােট হওয়াসহ হাত-পা বাঁকা হয়ে আসে। কন্ঠেও অাসে পরিবর্তন, কথা বলেন ভেঙে ভেঙে। তখন থেকে হামাগুড়ি দিয়ে আশপাশের এলাকার মানুষের সহায়তায় চলে তাঁর জীবন।
আক্ষেপের সূরে তাঁরা জানিয়েছেন, নিয়তির লিখনে নেই পরিবার-পরিজন। ফলে সুশ্রী ধরণীতে ফরজ আদায়ের সাধ দাফন হয়েছে সেই কবে।
এই দুখী মানুষটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেয়া ঘরে থেকে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পােযণ করেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাে. রায়হান কবির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহােদয়ের মুজিববর্ষে উপহার হিসেবে দেয়া ঘর প্রাপ্যদের তালিকা ইতিপূর্বে হয়ে গেছে। আবার যদি বরাদ্দ আসে পাওয়ার যােগ্য এমন উপকারভােগীদের তালিকা করে ঘর দেয়া হবে।