‘ফিল্মে হৃদ্যতা তো নাই, কেউ কারো খোঁজ নেয় না। আগে সাংঘাতিক হৃদত্যা ছিল। দেখা যেত স্টুডিওতে দশজন হিরো কাজ করতেছে, সবাই যে যার খবর নিত। এখন মনে হয় না এ রকমটা আছে! এখন তো শুনি পাশের ফ্লোরে কাজ করলেও কেউ কারো খবর নেয় না। এখন যে যার কাজ-কর্ম শেষ করেই দৌঁড়। কারণ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। উপায়ও নেই। সময়টা তো খুব খারাপ যাচ্ছে।’ বলেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
বর্তমানে অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়ে চার দেওয়ালে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। জনপ্রিয় এই অভিনেতা জানান, ‘এখনকার সময়গুলো দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে কাটে। আমি হাঁটতে পারি না, ঠিক করে। যার কারণে ঘরের বাইরে যাইতে পারি না। আর একটা হেল্পিং হ্যান্ড (সহকারি) লাগে আমার। না হলে লাঠিতে ভর করেই চলতে হয়। কোনো কিছূ করার ইচ্ছা থাকলেও কিছু করতে পারি না। যেটা আমার দু:খ লাগে, আমি অভিনয় করতে পারছি না।
চার যুগের ক্যারিয়ারে শুরুর দিকে নন্দিত নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন তৈরি করে নেন। চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকাকে ছাপিয়ে তার ফুটিয়ে তোলা চরিত্রগুলো দর্শকমহলে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে।
অভিনয়ে আসা নিয়ে বলেন, ‘আমার ফিল্মে নায়ক-টায়ক হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ফ্যাসিনেশনও ছিল না। ইচ্ছে ছিল অভিনেতা হব। যাই হোক, চাওয়া তো অনেক কিছুই থাকে, কটা পূরণ হয়? আমি অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম, অভিনেতার স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই আমার কাছে সব। আর কী কমু? এই তো। এসবের মধ্যে একটা ভালোলাগা আাছে। যা অন্য কোথাও নেই।’
তারপরও করা যেত। কিন্তু মেকাররা (নির্মাতারা) সেভাবে এগিয়ে আসে না। কিন্তু এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নাই। যা পেয়েছি জীবনে, অনেক পেয়েছি। এতটা পাওয়ার কথা ছিল না। কোটি কোটি মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। এর দাম তো দেওয়া যাবে না। আমার নামটা বললে পরেই মানুষের রিঅ্যাকশন হয়। এটা আমার কাছে পরম পাওয়া। বয়স তো কম হল না। ৭৭ থেকে ৭৮ এ পা রাখলাম। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক আয়ু দিয়েছে, আরও আয়ু দেবে। আমি আরও অনেক দিন বাঁচব। আমি পৃথিবী থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে চাই না।