হেলমেট মাথায় পার্ল সিলভার রঙের স্পোর্ট সেডান নিয়ে রানা আলমিমোনি রিয়াদ পার্কের চারপাশে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সেই গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন আর টায়ার ঘষার আওয়াজের সাথে তার পেছনে তৈরি হয়েছিল ধুলার মেঘ।
যা কয়েক সপ্তাহ আগেও সৌদি নারীদের জন্য ছিল অকল্পনীয় এক বিষয়। গতিপ্রেমী নারী গাড়িচালকরা খুবই রক্ষণশীল এই মরুর দেশে মুখ ফিরিয়ে রাখতে বাধ্য ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে গত জুনে নারী থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকে।
যা ছিল ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের আলোচিত নারী স্বাধীনতার কয়েকটি ধাপের একটি।
৩০ বছর বয়সী আলমিমোনির মটর রেসিংয়ে আগ্রহ প্রবল। সৌদি আরবে তিনি নতুন বোধ তৈরি করছেন বা বলা যায় লিঙ্গগত ভুল ধারণা ঠিক করছেন। অনেকেরই ধারণা নারী ড্রাইভাররা শুধু উজ্জ্বল রঙের কারই পছন্দ করে।
তিনি বলেন, আমি গতির আরাধনা করি, আমি গতিকে ভালোবাসি। আমার স্বপ্নের কারের গতি ৫০০ হর্সপাওয়ার। নারীদের শুধু গোলাপী রঙের কিউট কার পছন্দ করার বিষয়টি এখন মিথ।
আলমিমোনি জানান, সরকারের কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন, যে সিদ্ধান্ত নারীদের সুযোগ করে দেবে রেসিং লাইসেন্স পেতে। আর তাহলেই নিজের আবেগ পূরণ করতে মটর স্পোর্টস কম্পিটিশনে অংশ নিতে পারবেন।
সৌদি আরবে দ্রুতগতিতে কার চালানো কিংবা ড্রিফট করা (দ্রুত স্টিয়ারিং ঘোরানো যাতে কার স্লিপ করে বা ঘোরে) ভয়াবহ এক ধাপ। যেটা পাবলিক প্লেসে করা অবৈধ। তবে দিরাব পার্কে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা করতে পারে।
ওই পার্কের ইন্সট্রাক্টর ফারাহ আল জারবা বলেন, আমাদের কাছে বেশিরভাগ মেয়েই জানতে চায় ড্রিফটিং বিষয়ে। কিভাবে ড্রিফটিং শেখা যায়, কোন কারে তারা শিখতে পারবে এবং শিখতে কতটা সময় লাগবে ইত্যাদি।
অনেক নতুন ড্রাইভারও ন্যাশনাল মটর ফেডারেশনের প্রথম নারী সদস্য আসেল আল হামাদের থেকেও অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন। স্কিনি জিন্স আর হার্লি ডেভিডসনের টি শার্টে অনেক নারীই এখন রিয়াদ ড্রাইভিং স্কুলে মটর বাইক চালানোর ট্রেনিং নিচ্ছে।
রিয়াদের ৫৭ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাগওয়া মওসা বলেন, আমার মনে হয় না আমি আর সৌদি আরবে আছি। কিন্তু আমি সৌদি আরবের রাস্তায় খুব দ্রুত অনেক নারীকে ওভারটেক করতে এবং খুব জোরে গাড়ি চালাতে দেখতে চাই না।
‘কারণ এই ড্রাইভিংয়ের সংস্কার শুরু হয়েছিল নারীদের রূপান্তরের জন্য। যা তাদের পুরুষ আত্মীয়দের প্রতি নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দেবে।’