সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কাজ শেষ করে ক্লান্ত মানুষ যখন বাড়ি ফিরে, তখনই অন্যান্য প্রাণিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজা শুরু হয়।
চারদিকের কোলাহল, যানবাহনের কাটফাটা শব্দ ঘরমুখী মানুষগুলোকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। ঠিক তখনই এদিক-ওদিক ওড়াউড়ি শুরু করে চড়ুই পাখির ঝাঁক। শত ব্যস্ততার মাঝেও চড়ুই পাখির এমন কিচির মিচির শব্দ শুনতে ও তাদের দুষ্টুমির দৃশ্য এক পলক দেখার লোভ সামলাতে পারেন না ঘরমুখি ক্লান্ত মানুষ।
সন্ধ্যা নেমে এলে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পৌর শহরের জোড়া ব্রীজপাড় এলাকায় ও নকলা থানার ভিতরের বিভিন্ন গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে আশ্রয় নেয় হারিয়ে যেতে বসা অতি পরিচিত গ্রামিণ পাখি চড়ুই।
সেখানকার বকুল, আম, কাঁঠাল, মেহগনি ও কামিনি ফুল গাছসহ বিভিন্ন গাছগুলোই ওইসব চড়ুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সন্ধ্যার পরে গাছগুলোর ডাল ও পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধু পাখি আর পাখি দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায়।।
বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি আশ্রয় নেয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)’র অফিসের সামনের কামিনি ও মেহগনি গাছগুলোতে। কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে গোটা থানা চত্ত্বর। পাখিদের এমন দুষ্টুমিতে একটুও অতিষ্ঠ হননা গাছগুলোর অতিনিকটে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাগন। উল্টো কেউ যেন পাখিগুলোর কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে সর্বদায় নজর রাখেন তাঁরা।
গত কাল সন্ধ্যায় থানার ভিতরে গিয়ে অভূতপূর্ব এমন চিত্র নজরে আসে। দিনের আলো কমার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে চড়ুই পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। পুরাপুরি অন্ধকার নামার আগেই থানার ভিতরের গাছগাছালি চড়ুই পাখিতে ভরে যায়। শুরু হয় তাদের এদিক-ওদিক ওড়াউড়ি। এভাবে কিছুক্ষণ ছোটাছুটির পর গাছের ডালে বসে হইহুল্লোড় আর চেঁচামেচি করে নিজেদের স্থান করে নেয়। তার পরে শান্তিতে রাত কাটিয়ে, ভোর হওয়ার সাথে সাথে আবার ঝাঁতে ঝাঁকে বেড়িয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে।
বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, হারিয়ে যেতে বসা চড়ুই পাখিগুলো নকলা থানার চত্ত্বরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই তাদের হাতের নাগালে থাকতেও চড়ুই পাখি গুলো ভয় পায়না। এসআই বক্কর ও এমদাদ হোসেন হেসে হেসে বলেন, আমরা (নকলা থানার পুলিশ) শুধু মানুষের যান-মালের নিরাপত্তাই দেইনা, সব জীবের প্রতি নজর রাখি। বিশেষ করে রাতের বেলায় পাখির আশ্রয় ও রীতিমত নিরাপত্তাও দিচ্ছি আমরা।
ওসি খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, গত বছরের আগষ্ট মাসে হঠাৎ করেই কিছু চড়ুই পাখি আমার অফিসের সামনের কামিনি ফুল গাছে আশ্রয় নিতে শুরু করে। কেউ তাদের বিরক্ত না করায়, কিছুদিনের মধ্যে পাখির সংখ্যা কয়েকগুণ হয়ে যায়। ঝাঁক বেঁধে পাখিদের ওড়ার দৃশ্য আর কিচিরমিচির শব্দে মন ভরে যায়। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত মনে হয় আমরা সবুজ বৃক্ষে গেড়া শ্যামল ছায়া কোন এক প্রাকৃতিক ও গ্রামিন পরিবেশে অবস্থান করছি। এই সময়টুকুতে মনে হয়না যে, আমরা ব্যস্ততম কোন এক শহরে প্রান কেন্দ্রের এক থানায় অবস্থান করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি (আগস্টের শুরুতে) চড়ুই পাখিগুলো থানার ভিতরের গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়।
চড়ুই পাখির দুষ্টুমি আর কিচিরমিচিরে আকৃষ্ট হয়ে থানার চত্ত্বর রক্ষিত হওয়ায়, অনেকেই তাদের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যার সময় জোড়া ব্রীজপাড়ে ঘুরতে আসেন। পাখি প্রেমী অনেকেই জানান, ব্যস্ততম শহরের চিৎকার-চেঁচামেচি আর যানবাহনের শব্দের মাঝেও গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে পাখি দেখে যেকেউ মুগ্ধ হওয়ার কথা। সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে সন্ধ্যার সময় পাখির কলরব ও তাদের এদিক সেদিক ওড়াউড়ি দেখে যে কারও মন ভরে যায়। তাই সন্ধ্যার সময় জোড়াব্রীজপাড়ে পাখি ও প্রকৃতি প্রেমীদের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।